২০২৩ পুরুষোত্তম স্তোত্র

২০২৩ পুরুষোত্তম স্তোত্র

  • শ্রীগুর্বষ্টকম্‌
  • শ্রীপ্রভুপাদপদ্ম-স্তবকঃ
  • শ্রীষড়্‌গোস্বাম্যষ্টকম্
  • শ্রীগদাধরাষ্টকম্‌
  • শ্রীশচীসূন্বষ্টকম্
  • শ্রীরাধিকাষ্টকম্ (২)
  • শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্
  • শ্রীচৌরাগ্রগণ্য-পুরুষাষ্টকম্‌
  • শ্রীগুর্বষ্টকম্

    [শ্রীল-বিশ্বনাথ-চক্রবর্ত্তি-ঠক্কুর বিরচিতম্]

    সংসার-দাবানল-লীঢ়-লোক-
    ত্রাণায় কারুণ্যঘনাঘনত্বম্ ।
    প্রাপ্তস্য কল্যাণ-গুণার্ণবস্য
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥১॥

    সংসাররূপ দাবানল-সন্তপ্ত জীবসমূহের পরিত্রাণের জন্য যিনি কারুণ্য-মেঘ-রূপ প্রাপ্ত হইয়া কৃপাবারি বর্ষণ করেন, আমি সেই কল্যাণ-গুণনিধি শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম বন্দনা করি।

    মহাপ্রভোঃ কীর্ত্তন-নৃত্য-গীত-
    বাদিত্রমাদ্যন্মনসো রসেন ।
    রোমাঞ্চ-কম্পাশ্রু-তরঙ্গ-ভাজো
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥২॥

    শ্রীমন্মহাপ্রভুর প্রেমরসপূর্ণ সন্ধীর্ত্তন, নৃত্য, গীত ও বাদ্যাদি-দ্বারা উন্মত্তচিত্ত যাঁহার রোমাঞ্চ, কম্প, অশ্রুতরঙ্গ উদ্গত হয়, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

    শ্রীবিগ্রহারাধন-নিত্য-নানা-
    শৃঙ্গার-তন্মন্দির-মার্জ্জনাদৌ ।
    যুক্তস্য ভক্তাংশ্চ নিয়ুঞ্জতোঽপি
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৩॥

    যিনি শ্রীবিগ্রহের নিত্যসেবা, আদ্য-রসোদ্দীপক নানাবিধ বেশ-রচনা ও শ্রীমন্দির-মার্জ্জন প্রভৃতি সেবায় স্বয়ং নিযুক্ত থাকেন এবং [অনুগত] ভক্তগণকে সে-সকল সেবায় নিযুক্ত করেন, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

    চতুর্ব্বিধ-শ্রীভগবৎপ্রসাদ-
    স্বাদ্বন্ন-তৃপ্তান্ হরিভক্ত-সঙ্ঘান্ ।
    কৃত্বৈব তৃপ্তিং ভজতঃ সদৈব
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৪॥

    যিনি শ্রীকৃষ্ণ-ভক্তবৃন্দকে চর্ব্ব্য, চুষ্য, লেহ্য ও পেয়—এই চতুর্ব্বিধ রসসমন্বিত সুস্বাদু প্রসাদান্ন-দ্বারা পরিতৃপ্ত করিয়া (অর্থাৎ প্রসাদ সেবন-জনিত প্রপঞ্চ-নাশ ও প্রেমানন্দের উদয় করাইয়া) স্বয়ং তৃপ্তি লাভ করেন, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

    শ্রীরাধিকা-মাধবয়োরপার-
    মাধুর্য্য-লীলা-গুণ-রূপ-নাম্নাম্ ।
    প্রতিক্ষণাস্বাদন-লোলুপস্য
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৫॥

    যিনি শ্রীরাধামাধবের অনন্ত-মাধুর্য্যময় নাম, রূপ, গুণ ও লীলাসমূহ আস্বাদন করিবার জন্য সর্ব্বদা লু্ব্ধচিত্ত, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

    নিকুঞ্জযূনো-রতিকেলি-সিদ্ধ্যৈ
    র্যা যালিভির্যুক্তিরপেক্ষণীয়া ।
    তত্রাতিদাক্ষাদতিবল্লভস্য
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৬॥

    নিকুঞ্জবিহারী “ব্রজযুব-দ্বন্দ্বের” রতিক্রীড়া-সাধনের নিমিত্ত সখীগণ যে যে যুক্তি অবলম্বন করিয়া থাকেন, তদ্বিষয়ে অতিনিপুণতা-হেতু যিনি তাঁহাদের অতিশয় প্রিয়, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

    সাক্ষাদ্ধরিত্বেন সমস্ত-শাস্ত্রৈ-
    রুক্তস্তথা ভাব্যত এব সদ্ভিঃ ।
    কিন্তু প্রভোর্যঃ প্রিয় এব তস্য
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৭॥

    নিখিলশাস্ত্র যাঁহাকে সাক্ষাৎ শ্রীহরির অভিন্ন-বিগ্রহরূপে কীর্ত্তন করিয়াছেন এবং সাধুগণও যাঁহাকে সেইরূপেই চিন্তা করিয়া থাকেন, তথাপি যিনি—প্রভু শ্রীভগবানের একান্ত প্রেষ্ঠ, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম বন্দনা করি।

    যস্য প্রসাদাদ্ ভগবৎ-প্রসাদো
    যস্যাপ্রসাদান্ন গতিঃ কুতোঽপি ।
    ধ্যায়ংস্তুবংস্তস্য যশস্ত্রিসন্ধ্যং
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৮॥

    একমাত্র যাঁহার কৃপাতেই ভগবদনুগ্রহ-লাভ হয়, যিনি অপ্রসন্ন হইলে জীবের কোথাও গতি নাই, আমি ত্রিসন্ধ্যা সেই শ্রীগুরুদেবের কীর্ত্তিসমূহ স্তব ও ধ্যান করিতে করিতে তাঁহার পাদপদ্ম বন্দনা করি।

    শ্রীমদ্‌গুরোরষ্টকমেতদুচ্চৈ
    র্ব্রাহ্মে মুহূর্ত্তে পঠতি প্রয়ত্নাৎ ।
    যস্তেন বৃন্দাবন-নাথ-সাক্ষাৎ-
    সেবৈব লভ্যা জনুষোঽন্ত এব ॥৯॥

    যে ব্যক্তি এই শ্রীগুরুদেবাষ্টক ব্রাহ্মমুহূর্ত্তে (সূর্য্যোদয়ের দুই মুহূর্ত্ত পূর্ব্বকালে) অতিশয় যত্নের সহিত উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করেন, তিনি বস্তুসিদ্ধি-কালে বৃন্দাবনচন্দ্রের সেবাধিকার প্রাপ্ত হন।


    শ্রীশ্রীপ্রভুপাদপদ্ম-স্তবকঃ

    [শ্রীল-ভক্তিরক্ষক-শ্রীধর-গোস্বামী-মহারাজ-বিরচিতম্]

    সুজনার্ব্বুদ-রাধিত-পাদযুগং
    যুগধর্ম্ম-ধুরন্ধর-পাত্রবরম্
    বরদাভয়-দায়ক-পূজ্যপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥১॥

    কোটী কোটী সুজন-কর্ত্তৃক আরাধিত শ্রীপাদপদ্ম-যুগল, [কৃষ্ণকীর্ত্তনরূপ] যুগধর্ম্ম-সংস্থাপক, [বিশ্ববৈষ্ণব-রাজসভার] পাত্ররাজ, [নিখিল জীবের] মনোভীষ্ট-প্রদাতা ও অভয়-প্রদাতা সর্ব্বপূজ্য জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    ভজনোর্জ্জিত-সজ্জন-সঙ্ঘপতিং
    পতিতাধিক-কারুণিকৈকগতিম্
    গতিবঞ্চিত-বঞ্চকাচিন্ত্যপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥২॥

    যিনি ভজন-সমৃদ্ধ সুজনগণের অধিপতি, পতিতজনের প্রতি অধিক করুণাময় ও যিনি বঞ্চিতগণের একমাত্র গতি এবং বঞ্চকগণের নিকট অচিন্ত্যনীয়, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    অতিকোমল-কাঞ্চন-দীর্ঘতনুং
    তনুনিন্দিত-হেম-মৃণালমদম্
    মদনার্ব্বুদ-বন্দিত-চন্দ্রপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৩॥

    যিনি অতি কোমল সুবর্ণবর্ণ দীর্ঘতনু-বিশিষ্ট, যাঁহার তনু-কর্ত্তৃক স্বর্ণময় মৃণালের মত্ততা নিন্দিত হইতেছে, কোটী কোটী মদনকর্ত্তৃক বন্দিত নখচন্দ্রসমূহ যে শ্রীগুরুপাদপদ্মের শোভা বিস্তার করিতেছে, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    নিজসেবক-তারক-রঞ্জিবিধুং
    বিধুতাহিত-হুঙ্কৃত-সিংহবরম্-
    বরণাগত-বালিশ-শন্দপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৪॥

    আকাশে তারকা-বেষ্টিত চন্দ্রের ন্যায় যিনি নিজ সেবকমণ্ডলে পরিবেষ্টিত হইয়া তাঁহাদের চিত্ত প্রফুল্লিত করিয়া থাকেন, ভক্তিদ্বেষিগণ যাঁহার হুঙ্কারে বিদ্রাবিত হয় এবং নিরীহ জনগণ যাঁহার পাদপদ্ম বরণ করিয়া পরম কল্যাণ লাভ করেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    বিপুলীকৃত-বৈভব-গৌরভুবং
    ভুবনেষু বিকীর্ত্Tইত-গৌরদয়ম্
    দয়নীয়গণার্পিত-গৌরপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৫॥

    যিনি শ্রীগৌরধামের বিপুল বৈভব প্রকাশ করিয়াছেন, শ্রীগৌরাঙ্গের মহাবদান্যতার কথা যিনি নিখিল ভুবনে বিঘোষিত করিয়াছেন এবং নিজ কৃপাভাজন-জনগণের হৃদয়ে যিনি শ্রীগৌরপাদপদ্ম প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    চিরগৌর-জনাশ্রয়-বিশ্বগুরুং
    গুরু-গৌরকিশোরক-দাস্যপরম্
    পরমাদৃত-ভক্তিবিনোদপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৬॥

    যিনি গৌরাশ্রিত জনগণের নিত্য আশ্রয়-স্থলস্বরূপ জগদ্গুরু, যিনি নিজ গুরু শ্রীগৌরকিশোর-প্রভুর প্রতি সেবাপরায়ণ এবং যিনি শ্রীভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সম্বন্ধমাত্রে পরমাদরবিশিষ্ট, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    রঘু-রূপ-সনাতন-কীর্ত্তিধরং
    ধরণীতল-কীর্ত্তিত-জীবকবিম্
    কবিরাজ-নরোত্তম-সখ্যপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৭॥

    যিনি শ্রীরূপ-সনাতন ও রঘুনাথের কীর্ত্তিকেতন উত্তোলন করিয়া বিরাজমান, এই ধরণীতলে যাঁহাকে পাণ্ডিত্য-প্রতিভাময় শ্রীজীবের অভিন্নতনু বলিয়া অনেকে কীর্ত্তন করিয়া থাকেন এবং যিনি শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ ও ঠাকুর শ্রীনরোত্তমের সমপ্রাণ বলিয়া প্রসিদ্ধি-লাভ করিয়াছেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    কৃপয়া-হরিকীর্ত্তন- মূর্তি-ধরং
    ধরণী-ভরহারক-গৌরজনম্
    জনকাধিক-বৎসল- স্নিগ্ধপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৮॥

    জীবের প্রতি কৃপা করিয়া যিনি মূর্ত্তিমান্‌ হরিকীর্ত্তন-স্বরূপে প্রকাশিত, ধরণীর অপরাধভার-বিদূরণকারী শ্রীগৌরপার্ষদ এবং জীবের প্রতি পিতা অপেক্ষাও অধিক বাৎসল্য-স্নিগ্ধ, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    শরণাগত-কিঙ্কর-কল্পতরুং
    তরুধিক্কৃত-ধীর-বদান্যবরম্
    বরদেন্দ্র-গণার্চ্চিত-দিব্যপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৯॥

    শরণাগত-কিঙ্করগণের নিকট যিনি কল্পবৃক্ষ-স্বরূপ, যাঁহার সহিষ্ণুতা ও বদান্যবরতার নিকট বৃক্ষও ধিক্কৃত হয় এবং বরদশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণও যাঁহার দিব্য শ্রীপাদপদ্মের পূজা করিয়া থাকেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    পরহংসবরং পরমার্থপতিং
    পতিতোদ্ধরণে কৃত-বেশযতিম্
    যতিরাজগণৈঃ পরিসেব্যপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥১০॥

    পরমহংস-কুলতিলক যিনি পরমপুরুষার্থ শ্রীকৃষ্ণপ্রেম-সম্পত্তির অধিপতি, পতিতকুলের উদ্ধার নিমিত্ত যিনি যতিবেশ ধারণকারী এবং শ্রেষ্ঠ ত্রিদণ্ডী যতিগণ যাঁহার শ্রীপাদপদ্ম সেবা করিতেছেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।

    বৃষভানুসুতা-দয়িতানুচরং
    চরণাশ্রিত-রেণুধরস্তমহম্
    মহদদ্ভুত-পাবন-শক্তিপদং
    প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥১১॥

    যিনি শ্রীবৃষভানু-নন্দিনীর পরম প্রিয় শ্রীকৃষ্ণের অনুচর, যাঁহার শ্রীচরণরেণু আমি মস্তকে ধারণ করিবার সৌভাগ্যের অভিমান করিতেছি, সেই অদ্ভুত পাবনীশক্তি-সম্পন্ন জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।


    শ্রীষড়্‌গোস্বাম্যষ্টকম্

    [শ্রীল-শ্রীনিবাসাচার্য্য-বিরচিতম্]

    কৃষ্ণোৎকীর্ত্তন-গান-নর্ত্তন-পরৌ প্রেমামৃতাম্ভোনিধী
    ধীরাধীরজন-প্রিয়ৌ প্রিয়করৌ নির্ম্মত্সরৌ পূজিতৌ
    শ্রীচৈতন্য-কৃপাভরৌ ভুবি ভুবোভারাবহন্তারকৌ
    বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥১॥

    যাঁহারা শ্রীকৃষ্ণের নাম-রূপ-গুণ-লীলাদির কীর্ত্তন, গান এবং নৃত্যপরায়ণ, প্রেমামৃতের সমুদ্রস্বরূপ, বিদ্বান্‌-অবিদ্বান্‌ জনগণের প্রিয়, প্রত্যেকের প্রিয়কার্য্য-কারী, নির্ম্মৎসর, সর্ব্বলোক -পূজিত ও শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর অতিশয় কৃপাপাত্র এবং ভূতলে ভক্তিরস বিস্তারপূর্বক পৃথিবীর ভারহরণ-কারী, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল (শ্রীরঘুনাথদাস-গোস্বামী, শ্রীরঘুনাথ-ভট্ট-গোস্বামী) ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।

    নানাশাস্ত্র-বিচারণৈক-নিপুণৌ সদ্ধর্ম্ম-সংস্থাপকৌ
    লোকানাং হিতকারিণৌ ত্রিভুবনে মান্যৌ শরণ্যাকরৌ
    রাধাকৃষ্ণ-পদারবিন্দ-ভজনানন্দেন মত্তালিকৌ
    বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥২॥

    যাঁহারা বহছবিধ শাস্ত্রের গঢ় তাৎপর্য্য বিচার করিতে সুনিপুণ, শুদ্ধভক্তিরূপ পরমধর্ম্মের সংস্থাপক, সর্ব্বজনের মঙ্গলসাধক পরমহিতৈধবী, ব্রিভুবনে বন্দ্যমান্‌, শরণাগতবৎসল এবং শ্রী্রীরাধাগোবিন্দের চরণারবিদ্দের ভজনরূপ আনন্দরসে মত্ত মধুকরস্বরূপ, আমি সেই শ্রীশ্রীরাপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।

    শ্রীগৌরাঙ্গ-গুণানুবর্ণন-বিধৌ শ্রদ্ধা-সমৃদ্ধ্যন্বিতৌ
    পাপোত্তাপ-নিকৃন্তনৌ তনুভৃতাং গোবিন্দ-গানামৃতৈঃ
    আনন্দাম্বুধি-বর্দ্ধনৈক-নিপুণৌ কৈবল্য-নিস্তারকৌ
    বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৩॥

    যাঁহারা ভগবান্‌ শ্রীগৌরসুন্দরের বিবিধ গুণানুবর্ণনে প্রগাঢ় শ্রদ্ধাযুক্ত, শ্রীকৃষ্ণের গুণগানরূপ অমৃতবৃষ্টিদ্বারা প্রাণীমাত্রের পাপ-তাপ দূরকারী, প্রতি পদে (জীবের) আনন্দসিন্ধু বর্দ্ধনপূর্ব্বক জগন্মঙ্গলবিধানে রত এবং ভক্তিরস-সিঞ্চনদ্বারা জীবগণকে কৈবল্য-নামক মুক্তি হইতে উদ্ধারপরায়ণ, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।

    ত্যক্ত্বা তূর্ণমশেষ-মণ্ডলপতি-শ্রেণীং সদা তুচ্ছবৎ
    ভূত্বা দীনগণেশকৌ করুণয়া কৌপীন-কন্থাশ্রিতৌ
    গোপীভাব-রসামৃতাব্ধি-লহরী-কল্লোল-মগ্নৌ মুহু-
    র্বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৪॥

    যাঁহারা অশেষ মণ্ডলাধিপত্যকে লোকোত্তর বৈরাগ্যের দ্বারা অতি তুচ্ছজ্ঞানে চিরতরে ত্যাগ করিয়া কৃপাপূর্ব্বক কৌপীণ-কন্থাশ্রিত হইয়া দীন-ভক্তগণের শিরোমণি-রূপে মধুরিমাযুক্ত গোপীভাবরূপ রসামৃত-সমুদ্রের আনন্দতরঙ্গ-কল্লোলে নিমগ্ন, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।

    কূজৎ-কোকিল-হংস-সারস-গণাকীর্ণে ময়ূরাকুলে
    নানারত্ন-নিবদ্ধ-মূল-বিটপ-শ্রীযুক্ত-বৃন্দাবনে
    রাধাকৃষ্ণমহর্নিশং প্রভজতৌ জীবার্থদৌ যৌ মুদা
    বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৫॥

    কলরব-রত কোকিল-হংস-সারসাদি-পক্ষিশ্রেণীদ্বারা পরিবৃত, ময়ূরের কেকারবে মুখর, বৃক্ষরাজিদ্বারা শোভিত, বহুরত্ন-নিবদ্ধ শ্রীবৃন্দাবনে যাঁহারা সর্ব্বদা দিবারাত্রি শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের ভজনে নিমগ্ন এবং জীবমাত্রের আনন্দপ্রদানকারী ভক্তিরূপ পরম পুরুষার্থ-প্রদাতা, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।

    সঙ্খ্যাপূর্ব্বক-নাম-গান-নতিভিঃ কালাবসানীকৃতৌ
    নিদ্রাহার-বিহারকাদি-বিজিতৌ চাত্যন্তদীনৌ চ যৌ
    রাধাকৃষ্ণ-গুণ-স্মৃতের্মধুরিমানন্দেন সম্মোহিতৌ
    বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৬॥

    যাঁহারা সতত সংখ্যাপূর্বক নাম-জপাদি, নাম-সঙ্কীর্ত্তন এবং প্রণামাদিদ্বারা কালযাপন-কারী, নিদ্রা-আহার-বিহারাদিতে জিতেন্দ্রিয় এবং অত্যন্ত দৈন্যবিশিষ্ট হইয়া শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের গুণ-স্মরণের মাধুর্য্যজনিত পরমানন্দে সর্ব্বদা বিভোর, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।

    রাধাকুণ্ড-তটে কলিন্দ-তনয়া-তীরে চ বংশীবটে
    প্রেমোন্মাদ-বশাদশেষ-দশয়া গ্রস্তৌ প্রমত্তৌ সদা
    গায়ন্তৌ চ কদা হরের্গুণবরং ভাবাভিভূতৌ মুদা
    বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৭॥

    যাঁহারা প্রেমোন্মাদ-বশতঃ বিরহ-জাত অশেষদশা-গ্রস্ত হইয়া প্রমত্তের ন্যায় কখনও রাধাকুণ্ড-তটে, কখনও কলিন্দ-কন্যা যমুনার তটে, কখনও বা বংশীবটে সর্ব্বদাই ভ্রমণকারী, শ্রীহরির উন্নত গুণগাথা হর্ষভরে গান করিতে করিতে ভাবে বিভোর সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে আমি বন্দনা করি।

    হে রাধে! ব্রজদেবিকে! চ ললিতে! হে নন্দসূনো! কুতঃ
    শ্রীগোবর্দ্ধন-কল্পপাদপ-তলে কালিন্দী-বন্যে কুতঃ
    ঘোষন্তাবিতি সর্বতো ব্রজ-পুরে খেদৈর্মহাবিহ্বলৌ
    বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৮॥

    ‘হে ব্রজদেবি! রাধিকে! হে ললিতে! হে নন্দনন্দন! তোমরা কোথায়?’—শ্রীগোবর্দ্ধনের কল্পবৃক্ষতলে, না কি যমুনার কূলস্থিত বনসমূহে, কোথায়?’—এই প্রকার আর্ত্তনাদ-সহকারে যাঁহারা বিরহ-পীড়ায় মহাবিহ্বল থাকেন, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।


    শ্রীগদাধরাষ্টকম্‌

    শ্রীল স্বরূপ দামোদর গোস্বামী

    স্বভক্তিযোগ-লাসিনং সদা ব্রজে বিহারিণং
    হরি-প্রিয়া-গণাগ্রগং শচীসুত-প্রিয়েশ্বরম্ ।
    সরাধা-কৃষ্ণসেবন-প্রকাশকং মহাশযং
    ভজাম্যহং গদাধরং সুপণ্ডিতং গুরুং প্রভুম্ ॥১॥

    যিনি নিজ-ভক্তিযোগে বিলাস করত সর্ব্বদা ব্রজে বিহার করেন, যিনি হরিপ্রিয়া-গণের মধ্যে অগ্রগণ্য, শ্রীশচীনন্দন গৌরসুন্দরের প্রিয়গণের মধ্যে যিনি প্রধান, শ্রীরাধা-সহিত শ্রীকৃষ্ণের সেবার প্রকাশক, সেই মহাত্মা, সুপণ্ডিত ও সর্ব্বগুরু শ্রীল গদাধর প্রভুকে আমি ভজনা করি।

    নবোজ্জ্বলাদি-ভাবনা-বিধান-কর্ম্মপারগং
    বিচিত্র-গৌর-ভক্তি-সিন্ধু-রসভঙ্গ-লাসিনম্ ।
    সুরাগ-মার্গ-দর্শকং ব্রজাদি-বাস-দায়কং
    ভজাম্যহং গদাধরং সুপণ্ডিতং গুরুং প্রভুম্ ॥২॥

    নিত্যনব-উজ্জ্বল অর্থাৎ মধুর-রসাদি-ময়ী ভাবনার বিধান-ক্রিয়ায় যিনি পারঙ্গত, গৌরভক্তি-সিন্ধুর বিচিত্র রসতরঙ্গে যিনি বিলাসরত, সর্ব্বোত্তম রাগমার্গের প্রদর্শক ও গৌর-ব্রজাদি ধাম-বাসে অধিকার প্রদানকারী, আমি এরূপ সুপণ্ডিত ও সর্ব্বগুরু শ্রীল গদাধর প্রভুকে ভজনা করি।

    শচীসুতাঙ্ঘ্রিসার-ভক্ত-বৃন্দ-বন্দ্য-গৌরবং
    গৌরভাব-চিত্তপদ্ম-মধ্য-কৃষ্ণ-সুবল্লভম্ ।
    মুকুন্দ-গৌররূপিণং স্ব-ভাব-ধর্ম্ম-দায়কং
    ভজাম্যহং গদাধরং সুপণ্ডিতং গুরুং প্রভুম্ ॥৩॥

    শ্রীশচীসুত-পাদপদ্মে ঐকান্তিক আশ্রিত ভক্তবৃন্দের দ্বারা যিনি বন্দনীয় এবং গৌরবের বস্ত, শ্রীগৌরহরির ভাবরূপ-চিত্তপদ্ম মধ্যে বিরাজিত শ্রীকৃষ্ণই যাঁহার প্রাণবল্লভ, শ্রীগৌররূপী কৃষ্ণকে যিনি নিজের হৃদয়ের ভাবরূপ ধর্ম্ম (মাদনাথ্য মহাভাব) প্রদানকারী, আমি এরূপ সুপণ্ডিত ও সর্ব্বগুরু শ্রীল গদাধর প্রভুকে ভজনা করি।

    নিকুঞ্জ-সেবনাদিক-প্রকাশনৈক-কারণং
    সদা সখীরতি-প্রদং মহারস-স্বরূপকং ।
    সদাশ্রিতাঙ্ঘ্রি-পুণ্ডরীক-প্রদং (পঙ্কজং শরীরি-) সদ্‌গুরুং বরং
    ভজাম্যহং গদাধরং সুপণ্ডিতং গুরুং প্রভুম্ ॥৪॥

    যিনি নিকুঞ্জ-প্রেমসেবাদি প্রকাশের একমাত্র কারণ, সর্ব্বদা সখীরতি (গোপীভাব) প্রদাতা এবং মহারস-স্বরূপ, সর্ব্বদা আশ্রিতগণকে যিনি স্বীয় চরণপদ্ম প্রদানকারী সদ্‌গুরুবর্য্য, আমি এরূপ সুপণ্ডিত ও সর্ব্বগুরু শ্রীল গদাধর প্রভুকে বন্দনা করি।

    মহাপ্রভোর্মহারস-প্রকাশনাঙ্কুরং প্রিয়ং
    সদা মহারসাঙ্কুর-প্রকাশনাদি-বাসনাং ।
    মহাপ্রভোর্ব্রজাঙ্গনাদি-ভাব-মোদ-কারকং
    ভজাম্যহং গদাধরং সুপণ্ডিতং গুরুং প্রভুম্ ॥৫॥

    শ্রীন্মহাপ্রভুর মহারস-প্রকাশের যিনি প্রিয় অঙ্কুর-স্বরূপ, মহারসাঙ্কুর-প্রকাশে সর্ব্বদা বাসনাযুক্ত এবং মহাপ্রভুর ব্রজাঙ্গনাদি-ভাবাস্বাদনে আনন্দবিধান-কারী, আমি এরূপ সুপণ্ডিত ও সর্ব্বগুরু শ্রীল গদাধর প্রভুকে ভজনা করি।

    দ্বিজেন্দ্র-বৃন্দ-বন্দ্য-পাদযুগ্ম-ভক্তি-বর্দ্ধকং
    নিজেষু রাধিকাত্মতা-বপুঃ-প্রকাশনাগ্রহম্ ।
    অশেষ-ভক্তিশাস্ত্র-শিক্ষয়োজ্জ্বলামৃত-প্রদং
    ভজাম্যহং গদাধরং সুপণ্ডিতং গুরুং প্রভুম্ ॥৬॥

    দ্বিজেন্দ্রবৃন্দের নিত্য বন্দনীয় শ্রীহরির চরণযুগলে ভক্তিবর্দ্ধনে যিনি সমর্থ, নিজগণ-মধ্যে স্বীয় রাধিকাত্মক বিগ্রহ-প্রকাশে আগ্রহবান্‌, অশেষ ভক্তিশাস্ত্র-শিক্ষাদ্বারা উজ্জ্বলরসামৃত প্রদানকারী, এরূপ সুপণ্ডিত ও সর্ব্বগুরু শ্রীল গদাধর প্রভুকে আমি ভজনা করি।

    মুদা নিজ-প্রিয়াদিক-স্বপাদপদ্ম-সীধুভি
    র্মহারসার্ণবামৃত-প্রদেষ্ট-গৌরভক্তিদম্ ।
    সদাষ্ট-সাত্ত্বিকান্বিতং নিজেষ্ট-ভক্তি-দায়কং
    ভজাম্যহং গদাধরং সুপণ্ডিতং গুরুং প্রভুম্ ॥৭॥

    সানন্দে নিজ-প্রিয়বর্গকে যিনি স্বীয় পাদপদ্ম-মকরন্দসহ নিজাভীষ্ট মহারসসিন্ধু-রূপ অমৃতপ্রদ গৌরভক্তি প্রদান করেন, যিনি সর্ব্বদা অষ্ট-সাত্ত্বিক-ভাবান্বিত এবং নিজ ইষ্ট-ভক্তিদাতা—এরূপ সুপণ্ডিত ও সর্ব্বগুরু শ্রীল গদাধর প্রভুকে ভজনা করি।

    যদীয়-রীতিরাগ-রঙ্গভঙ্গ-দিগ্ধ-মানসো
    নরোঽপি যাতি তূর্ণমেব নার্য্যভাব-ভাজনম্ ।
    তমুজ্জ্বলাক্ত-চিত্তমেতু চিত্ত-মত্ত-ষট্‌পদো-
    ভজাম্যহং গদাধরং সুপণ্ডিতং গুরুং প্রভুম্ ॥৮॥

    যাঁহার রীতিরাগ-রঙ্গ-তরঙ্গে প্লাবিতমনা ব্যক্তি শীঘ্রই নারী অর্থাৎ ব্রজবধূভাবভাজন হন ও তাঁহার চিত্তরূপ মত্ত-ভ্রমর সেই উজ্জ্বল-রসাত্মক চিত্ত প্রাপ্ত হয়, আমি এরূপ সুপণ্ডিত ও সর্ব্বগুরু শ্রীল গদাধর প্রভুকে বন্দনা করি।

    মহারসামৃতপ্রদং সদা গদাধরাষ্টকং
    পঠেৎ তু যঃ সুভক্তিতো ব্রজাঙ্গনা-গণোৎসবম্ ।
    শচীতনুজ-পাদপদ্ম-ভক্তিরত্ন-যোগ্যতাং
    লভেত রাধিকা-গদাধরাঙ্ঘ্রি-পদ্ম-সেবয়া ॥৯॥

    ব্রজাঙ্গনাগণের উৎসব-রূপ মহারসামৃত-প্রদ এই গদাধরাষ্টক যিনি অত্যন্ত ভক্তিসহকারে সর্ব্বদা পাঠ করেন, তিনি শ্রীমতী রাধিকা-স্বরূপ শ্রীগদাধর-পণ্ডিতের চরণকমল-সেবাদ্বারা শ্রীশচীনন্দন-পাদপদ্মে ভক্তিরত্ন লাভের যোগ্যতার্জ্জন করেন।


    শ্রীশ্রীশচীসুম্বষ্টকম্‌

    [ শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামি-বিরচিতম্ ]

    হরির্দৃষ্টা গোষ্ঠে মুকুর-গতমাত্মানমতুলং
    স্বমাধুর্য্যং রাধা-প্রিয়তর-সখীবাপ্তুমভিতঃ ।
    অহো গৌড়ে জাতঃ প্রভুরপর-গৌরৈক-তনুভাক্‌
    শচীসূনুঃ কিং মে নয়নশরণীং যাস্যতি পুনঃ ॥১॥

    যে হরি (শ্রীকৃষ্ণ) ব্রজে দর্পণ-মধ্যে আপনার নিরুপম শ্রীঅঙ্গ দর্শন করিয়া প্রিয়তমা সখী শ্রীমতী রাধিকার ন্যায় নিজ-মাধুর্য্যকে সর্ব্বতোভাবে আপনাতে অনুভব করিবার জন্য অহো! অপর এক গৌরবর্ণ তনু-রূপে গৌড়দেশে আবির্ভূত হইয়াছিলেন, সেই প্রভু শচীনন্দন কি পুনর্ব্বার আমার নয়ন-পথ-প্রাপ্ত হইবেন?

    পুরীদেবস্যান্তঃপ্রণয়-মধুনা স্নান-মধুরো
    মুহুর্গোবিন্দোদ্যদ্‌-বিশদ-পরিচর্য্যার্চ্চত-পদঃ ।
    স্বরূপস্য প্রাণাৰ্ব্বুদ-কমল-নীরাজিত-মুখঃ
    শচীসূনুঃ কিং মে নয়নশরণীং যাস্যতি পুনঃ ॥২॥

    যিনি পুরীদেব অর্থাৎ শ্রীল পরমানন্দ-পুরী গোস্বামীর অন্তঃকরণস্থিত বাৎসল্যপ্রেম-মধুতে স্নাত হইয়া তৎপ্রতি স্নেহবিশিষ্ট এবং গোবিন্দ-নামক সেবক-কর্ত্তৃক মুহুর্মুহুঃ প্রকাশমানা নির্ম্মলা পরিচর্য্যা দ্বারা যাঁহার শ্রীচরণদ্বয় নিরন্তর সেবিত এবং শ্রীস্বরূপগোস্বামীর অসংখ্য প্রাণপদ্মদ্বারা যাঁহার শ্রীমুখ নীরাজিত, সেই শচীনন্দন কি পুনর্ব্বার আমার নয়ন-পথ-প্রাপ্ত হইবেন?

    দধানঃ কৌপীনং তদুপরি বহির্বস্ত্রমরুণং
    প্রকাণ্ডো হেমাদ্রি-দ্যুতিভিরভিতঃ সেবিত-তনুঃ ।
    মুদা গায়ন্নুচ্চৈর্নিজ-মধুর-নামাবলিমসৌ
    শচীসূনুঃ কিং মে নয়নশরণীং যাস্যতি পুনঃ ॥৩॥

    যিনি [পরমেশ্বর হইয়াও ভক্তশিক্ষার নিমিত্ত] স্বয়ং কৌপীন এবং তদুপরি অরুণবর্ণ বহির্ব্বাস ধারণ করিয়াছিলেন এবং হেম-পর্ব্বতের (অর্থাৎ সুমেরু-পর্ব্বতের) স্বর্ণকান্তি-দ্বারা যাঁহার শ্রীঅঙ্গ সর্ব্বতোভাবে সেবিত হয়, যিনি উচ্চৈঃস্বরে স্বীয় মধুর নামসমূহ অতি আহ্লাদে গান করিতেন, সেই শচীনন্দন কি পুনর্ব্বার আমার নয়ন-পথ-প্রাপ্ত হইবেন?

    অনাবেদ্যাং পূর্ব্বৈরপি মুনিগণৈর্ভক্তি-নিপুণৈঃ
    শ্রুতের্গূঢ়াং প্রেমোজ্জ্বল-রসফলাং ভক্তি-লতিকাম্ ।
    কৃপালুস্তাং গৌড়ে প্রভুরতিকৃপাভিঃ প্রকটয়ন্
    শচীসূনুঃ কিং মে নয়নশরণীং যাস্যতি পুনঃ ॥৪॥

    পূর্ব্ব পূর্ব্ব ভক্তিনিপুণ মুনিগণ যাঁহার সম্বন্ধে সম্যক্‌ জ্ঞান লাভ করিতে পারেন নাই এবং শ্রুতিগণ যাঁহাকে অমূল্যরত্নের ন্যায় গোপন করিয়া রাখিয়াছিলেন, সেই উজ্জ্বল-প্রেমরসময় ফলযুক্তা এমন ভক্তিলতা যে কৃপালু প্রভু গৌড়দেশে অতি কৃপাদ্বারা প্রকট করিয়াছেন, সেই শ্রীশচীনন্দন কি পুনর্ব্বার আমার নয়ন-পথ-প্রাপ্ত হইবেন?

    নিজত্বে গৌড়ীয়ান্ জগতি পরিগৃহ্য প্রভুরিমান্‌
    হরেকৃষ্ণেত্যেবং গণন-বিধিনা কীৰ্ত্তয়ত ভোঃ ।
    ইতিপ্রায়াং শিক্ষাং জনক ইব তেভ্যঃ পরিদিশন্‌
    শচীসূনুঃ কিং মে নয়নশরণীং যাস্যতি পুনঃ ॥৫॥

    যিনি জগতে এই গৌড়ীয়গণকে আত্মীয়রূপে স্বীকার করিয়া ‘ওহে এইপ্রকার গণন-বিধিদ্বারা (সংখ্যাপূর্ব্বক) “হরে কৃষ্ণ” মহামন্ত্র কীর্ত্তন কর’—এইরূপে তাঁহাদিগকে পিতার ন্যায় শিক্ষা উপদেশ দিয়াছিলেন, সেই শচীনন্দন কি পুনর্ব্বার আমার নয়ন-পথ-প্রাপ্ত হইবেন?

    পুরঃ পশ্যন্ নীলাচল-পতিমুরুপ্রেম-নিবহৈঃ
    ক্ষরন্ নেত্রাম্ভোভিঃ স্নপিত-নিজ-দীর্ঘোজ্জ্বল-তনুঃ ।
    সদা তিষ্ঠন্ দেশে প্রণয়ি-গরুড়স্তম্ভ-চরমে
    শচীসূনুঃ কিং মে নয়নশরণীং যাস্যতি পুনঃ ॥৬॥

    প্রণয়িগরুড়-স্তম্ভের পশ্চাদ্দেশে সর্ব্বদা অবস্থান করত সম্মুখবর্ত্তী নীলাচলপতি শ্রীজগন্নাথদেবকে দর্শন করিতে থাকিলে যাঁহার মহাপ্রেমাবেশে বর্ষিত অশ্রু-ধারায় নিজ দীর্ঘ উজ্জ্বল তনু স্নাত হইত, সেই শ্রীশচীনন্দন কি পুনর্ব্বার আমার নয়ন-পথ-প্রাপ্ত হইবেন?

    মুদা দন্তৈর্দষ্ট্বা দ্যুতি-বিজিত-বন্ধুকমধরং
    করং কৃত্বা বামং কটি-নিহিতমন্যং পরিলসন ।
    সমুত্থাপ্য প্রেম্নাগণিত-পুলকো নৃত্যকুতুকী
    শচীসূনুঃ কিং মে নয়নশরণীং যাস্যতি পুনঃ ॥৭॥

    যে অধরের কান্তিদ্বারা রক্তবর্ণ পুষ্প ‘বন্ধূক’ পরাজয় প্রাপ্ত হয়, সেই স্বীয় অধরকে দন্তসমূহদ্বারা দংশন করত স্বীয় বামহস্ত কটিতটে অর্পণ করিয়া যিনি অপর দক্ষিণহস্ত উত্তোলনপূর্ব্বক প্রেমাবেশে অগণিত পুলক-সহকারে নর্ত্তন-কৌতুক বিশিষ্ট হইয়াছিলেন, সেই শ্রীশচীনন্দন কি পুনর্ব্বার আমার নয়ন-পথ-প্রাপ্ত হইবেন?

    সরিত্তীরারামে বিরহ-বিধুরো গোকুলবিধো-
    র্নদীমন্যাং কুৰ্ব্বন্ নয়ন-জলধারা-বিততিভিঃ ।
    মুহুর্মূৰ্চ্ছাং গচ্ছন্ মৃতকমিব বিশ্বং বিরচয়ন্
    শচীসূনুঃ কিং মে নয়নশরণীং যাস্যতি পুনঃ ॥৮॥

    নদীতীরস্থ উপবনে গোকুলচন্দ্র শ্রীকৃষ্ণের বিরহে ব্যাকুল হইয়া যিনি নিরবিচ্ছিন্ন নয়ন-জলধারায় অন্য একটী নদী সৃজন করিয়াছিলেন এবং যিনি বারম্বার মূর্চ্ছাপ্রাপ্ত হইয়া তত্রস্থ জনসমূহকে প্রেমে অচেতন করিয়াছিলেন, সেই শ্রীশচীনন্দন কি পুনর্ব্বার আমার নয়ন-পথ-প্রাপ্ত হইবেন?

    শচীসূনোরস্যাষ্টকমিদমভীষ্টং বিরচয়ৎ
    সদা দৈন্যোদ্রেকাদতিবিশদ-বুদ্ধিঃ পঠতি যঃ ।
    প্রকামং চৈতন্যঃ প্রভুরতি-কৃপাবেশ-বিবশঃ
    পৃথু-প্রেমাম্ভোধৌ প্রথিত-রসদে মজ্জয়তি তম্ ॥৯॥

    যে ব্যক্তি বিশুদ্ধ-বুদ্ধি হইয়া দৈন্যাতিশয়-সহকারে স্বীয় অভীষ্টপ্রদ শ্রীশচীনন্দনের এই অষ্টক পাঠ করেন, শ্রীচৈতন্যদেব তাঁহার প্রতি কৃপাবিশিষ্ট হইয়া তাঁহাকে শ্রীকৃষ্ণবিষয়ক রসের অস্বাদন-স্বরূপ বিস্তীর্ণ প্রেম-সমুদ্রে নিমগ্ন করেন।


    শ্রীশ্রীরাধিকাষ্টকম্ (২)

    [শ্রীরঘুনাথদাস-গোস্বামি-বিরচিতম]

    রসবলিত-মৃগাক্ষী-মৌলি-মাণিক্য-লক্ষ্মীঃ
    প্রমুদিত-মুরবৈরি-প্রেমবাপী-মরালী ।
    ব্রজবর-বৃষভানোঃ পুণ্য-গীৰ্ব্বাণবল্লী
    স্নপয়তি নিজ-দাস্যে রাধিকা মাং কদা নু ॥১॥

    যিনি রস-উচ্ছলিতা মৃগনয়নী গোপীগণের মস্তকে ধৃত মাণিক্যের শোভা-স্বরূপা, আনন্দিত মুরনাশন শ্রীকৃষ্ণের প্রেম-সরোবর যাঁহার জীবাতু, এইরূপ হংসী-স্বরূপা, যিনি ব্রজশ্রেষ্ঠ শ্রীবৃষভানুরাজের পবিত্র কল্পলতা-স্বরূপা, সেই শ্রীরাধিকা কবে আমাকে স্বীয় দাস্যে অভিষিক্ত করিবেন?

    স্ফুরদরুণ-দুকূল-দ্যোতিতোদ্যন্ নিতম্ব-
    স্থলমভি-বরকাঞ্চি-লাস্যমুল্লাসয়ন্তী ।
    কুচকলস-বিলাস-স্ফীত-মুক্তাসর-শ্রীঃ
    স্নপয়তি নিজ-দাস্যে রাধিকা মাং কদা নু ॥২॥

    অরুণবর্ণের পট্টবস্ত্রে সুশোভিত নিতম্বস্থলে যিনি দোদুল্যমান ক্ষুদ্র-ঘণ্টিকার নৃত্য প্রকাশ করেন এবং কুচ-কুম্ভোপরি বিলসিত দীর্ঘ মুক্তামালার দ্বারা যাঁহার শোভা সম্পন্ন হইতেছে, সেই শ্রীরাধিকা কবে আমায় নিজ-দাস্যে অভিষিক্ত করিবেন?

    সরসিজবর-গর্ভাখৰ্ব্ব-কান্তিঃ সমুদ্যৎ
    তরুণিম-ঘনসারাশ্লিষ্ট-কৈশোর-সীধুঃ ।
    দর-বিকশিত-হাস্য-স্যন্দি-বিম্বাধরাগ্রা
    স্বপয়তি নিজ-দাস্যে রাধিকা মাং কদা নু ॥৩॥

    যিনি উৎকৃষ্ট পদ্মের কর্ণিকার ন্যায় অতিশয় কান্তিবিশিষ্টা, যাঁহার কৈশোর-রূপ অমৃত-উজ্জ্বল তারুণ্য-রূপ কর্পূরদ্বারা মিশ্রিত এবং যাঁহার বিম্বফল তুল্য অধরের অগ্রভাগ হইতে ঈষৎ বিকশিত হাস্য প্রবাহিত হইয়া থাকে, সেই শ্রীরাধিকা কবে আমাকে স্বীয় দাস্যে অভিষিক্ত করিবেন?

    অতি-চটুলতরং তং কাননান্তর্মিলন্তং
    ব্রজনৃপতি-কুমারং বীক্ষ্য শঙ্কাকুলাক্ষী ।
    মধুর-মৃদুবচোভিঃ সংস্তুতা নেত্রভঙ্গ্যা
    স্নপয়তি নিজ-দাস্যে রাধিকা মাং কদা নু ॥৪॥

    কানন-মধ্যে আসিয়া মিলিত অতি চপল ব্রজরাজ-নন্দনকে দর্শন করিয়া যাঁহার নেত্রদ্বয় শঙ্কাকুল হইয়া থাকে এবং যিনি নেত্রভঙ্গি বিস্তার করিয়া সুমধুর মৃদু-বাক্যদ্বারা কৃষ্ণকে স্তব করিয়া থাকেন, সেই শ্রীরাধিকা কবে আমায় নিজদাস্যে অভিষিক্ত করিবেন?

    ব্রজকুল-মহিলানাং প্রাণভূতাখিলানাং
    পশুপ-পতি-গৃহিণ্যাঃ কৃষ্ণবৎ-প্রেমপাত্রম্ ।
    সুললিত-ললিতান্তঃস্নেহ-ফুল্লান্তরাত্মা
    স্নপয়তি নিজ-দাস্যে রাধিকা মাং কদা নু ॥৫॥

    যিনি নিখিল ব্রজ-মহিলাগণের প্রাণ-স্বরূপা, যিনি গোপরাজ-গৃহিণী যশোদাদেবীর নিকট কৃষ্ণ-তুল্য স্নেহের পাত্রী, যাঁহার অন্তরাত্মা ললিতাসখীর সুললিত আন্তরিক স্নেহে প্রফুল্লিত হয়, সেই শ্রীরাধিকা কবে আমাকে স্বীয় দাস্যে অভিষিক্ত করিবেন?

    নিরবধি সবিশাখা শাখিযূথ-প্ৰসূনৈঃ
    স্ৰজমিহ রচয়ন্তী বৈজয়ন্তীং বনান্তে ।
    অঘবিজয়-বরোরঃ-প্রেয়সী শ্রেয়সী সা
    স্নপয়তি নিজ-দাস্যে রাধিকা মাং কদা নু ॥৬॥

    এই বনমধ্যে যিনি নিরন্তর বিশাখার সহিত নানা বৃক্ষের বিবিধ পুষ্পদ্বারা বৈজয়ন্তী-মালা রচনা করেন, যিনি শ্রেয়সী অর্থাৎ মঙ্গলস্বরূপা, অতএব অঘবিজেতা কমনীয় বক্ষোবিশিষ্ট শ্রীকৃষ্ণের পরম প্রেয়সী-রূপা, সেই শ্রীরাধিকা কবে আমায় নিজ-দাস্যে অভিষিক্ত করিবেন?

    প্রকটিত-নিজবাসং স্নিগ্ধবেণু-প্ৰণাদৈ-
    র্দ্রুতগতি-হরিমারাৎ প্রাপ্য কুঞ্জে স্মিতাক্ষী ৷
    শ্রবণ-কুহর-কণ্ডূং তন্বতী নম্ৰবক্তা
    স্নপয়তি নিজ-দাস্যে রাধিকা মাং কদা নু ॥৭॥

    যিনি বেণুধ্বনি শ্রবণপূর্ব্বক কুঞ্জমধ্যে নিবাস-কারী শ্রীকৃষ্ণের নিকট দ্রুত গমন করিয়া নেত্রদ্বয় ঈষৎ উন্মীলন করত নত-বদনা হইয়া কর্ণকুহরে কণ্ডূয়ন বিস্তার করেন, সেই শ্রীরাধিকা কবে আমাকে স্বীয় দাস্যে অভিষিক্ত করিবেন?

    অমল-কমল-রাজি-স্পর্শি-বাত-প্রশীতে
    নিজ-সরসি নিদাঘে সায়মুল্লাসিনীয়ম্ ।
    পরিজনগণ-যুক্তা ক্রীড়য়ন্তী বকারিং
    স্নপয়তি নিজ-দাস্যে রাধিকা মাং কদা নু ॥৮॥

    নির্ম্মল পদ্মরাজি-সংস্পর্শশীল বায়ুদ্বারা সুশীতল নিজ সরোবরে (রাধাকুণ্ডে) যিনি গ্রীষ্ম-সময়ের সায়ংকালে পরমানন্দ লাভ করত সখীগণ-পরিবেষ্টিত হইয়া বকাসুর-বিনাশী শ্রীকৃষ্ণকে ক্রীড়া করাইতেছেন, সেই শ্রীরাধিকা কবে আমায় নিজ-দাস্যে অভিষিক্ত করিবেন?

    পঠতি বিমলচেতা মৃষ্ট-রাধাষ্টকং যঃ
    পরিহৃত-নিখিলাশা-সন্ততিঃ কাতরঃ সন্ ।
    পশুপ-পতি-কুমারঃ কামমামোদিতস্তং
    নিজজন-গণমধ্যে রাধিকায়াস্তনোতি ॥৯॥

    যিনি নিখিল আশা-পরম্পরা পরিত্যাগ করত নির্ম্মল-চিত্ত হইয়া কাতর-ভাবে এই পরিশুদ্ধ শ্রীরাধাষ্টক পাঠ করেন, গোপরাজ-নন্দন শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত হৃষ্ট হইয়া তাঁহাকে শ্রীরাধিকার নিজগণ-মধ্যে পরিগণিত করেন।


    শ্রীশ্রীজগন্নাথাষ্টকম্

    [শ্রীগৌরচন্দ্রমুখপদ্ম-বিনির্গতম্]

    কদাচিৎ কালিন্দীতট-বিপিন-সঙ্গীত-তরলো
    মুদাভীরী-নারী-বদন-কমলাস্বাদ-মধুপঃ ।
    রমা-শম্ভু-ব্রহ্মা-মরপতি-গণেশার্চ্চিতপদো
    জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথ-গামী ভবতু মে ॥১॥

    ভুজে সব্যে বেণুং শিরসি শিখিপিচ্ছং কটিতটে
    দুকূলং নেত্রান্তে সহচরি-কটাক্ষং বিদধতে ।
    সদা শ্রীমদ্‌বৃন্দাবন-বসতি-লীলা-পরিচয়ো
    জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথ-গামী ভবতু মে ॥২॥

    মহাম্ভোধেস্তীরে কনকরুচিরে নীলশিখরে
    বসন্ প্রাসাদান্তঃ সহজ-বলভদ্রেন বলিনা ।
    সুভদ্রা-মধ্যস্থঃ সকল-সুর-সেবাবসরদো
    জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথ-গামী ভবতু মে ॥৩॥

    কৃপা-পারাবারঃ সজল-জলদ-শ্রেণি-রুচিরো
    রমা-বাণী-রামঃ স্ফুরদমল-পঙ্কেরুহ-মুখঃ ।
    সুরেন্দ্রৈরারাধ্যঃ শ্রুতিগণশিখা গীতচরিতো
    জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথ-গামী ভবতু মে ॥৪॥

    রথারূঢ়ো গচ্ছন্ পথি মিলিত-ভূদেব-পটলৈঃ
    স্তুতি-প্রাদুর্ভাবং প্রতিপদমুপাকর্ণ্য সদয়ঃ ।
    দয়াসিন্ধুর্বন্ধুঃ সকল জগতাং সিন্ধু-সুতয়া
    জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথ-গামী ভবতু মে ॥৫॥

    পরংব্রহ্মাপীড়ঃ কুবলয়-দলোৎফুল্ল-নয়নো
    নিবাসী নিলাদ্রৌ নিহিত-চরণোঽনন্ত-শিরসি ।
    রসানন্দী রাধা-সরস-বপুরালিঙ্গন-সুখো
    জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথ-গামী ভবতু মে ॥৬॥

    ন বৈ যাচে রাজ্যং ন চ কনক-মাণিক্য-বিভবং
    ন যাচেঽহং রম্যাং সকল-জন-কাম্যাং বরবধূম্ ।
    সদা কালে কালে প্রমথ-পতিনা গীত-চরিতো
    জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথ-গামী ভবতু মে ॥৭॥

    হর ত্বং সংসারং দ্রুততরমসারং সুরপতে!
    হর ত্বং পাপানাং বিততিমপরাং যাদবপতে!
    অহো দীনেঽনাথে নিহিত-চরণো নিশ্চিতমিদং
    জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথ-গামী ভবতু মে ॥৮॥

    জগন্নাথাষ্টকং পুণ্যং
    যঃ পঠেৎ প্রয়তঃ শুচিঃ ।
    সর্ব্বপাপ-বিশুদ্ধাত্মা
    বিষ্ণুলোকং স গচ্ছতি ॥৯॥


    শ্রীচৌরাগ্রগণ্য-পুরুষাষ্টকম্

    শ্রী বিল্বমঙ্গল ঠাকুর

    ব্রজে প্রসিদ্ধং নবনীতচৌরং,
    গোপাঙ্গনানাঞ্চ দুকূলচৌরম্ ।
    অনেক-জন্মাৰ্জ্জিত-পাপচৌরং
    চৌরাগ্রগণ্যং পুরুষং নমামি ॥১॥

    যিনি ব্রজে নবনীত চোর ও গোপাঙ্গনা-গণের বসন-চোর বলিয়া প্রসিদ্ধ ও যিনি [ভক্তগণের] অশেষ জন্মার্জ্জিত পাপসকল হরণ করেন, সেই চোর-শিরোমণিকে আমি নমস্কার করি।

    শ্রীরাধিকায়া হৃদয়স্য চৌরং
    নবাম্বুদ-শ্যামল-কান্তি-চৌরম্ ।
    পদাশ্রিতানাঞ্চ সমস্ত-চৌরং
    চৌরাগ্রগণ্যং পুরুষং নমামি ॥২॥

    যিনি শ্রীরাধিকার চিত্ত-চোর, যিনি নবমেঘের কান্তি-চোর ও যিনি স্বচরণাশ্রিত ভক্তগণের সর্ব্বস্ব-চোর, সেই চোর-শিরোমণিকে আমি নমস্কার করি।

    অকিঞ্চনীকৃত্য পদাশ্রিতং যঃ
    করোতি ভিক্ষুং পথি গেহহীনম।
    কেনাপ্যহো ভীষণ-চৌর ঈদৃগ্‌
    দৃষ্টঃ শ্রুতো বা ন জগৎত্ৰয়েঽপি ॥৩॥

    যিনি স্বচরণাশ্রিত জনগণকে [তাঁহাদের সর্ব্বস্ব হরণপূর্ব্বক] অকিঞ্চন করিয়া তাঁহাদিগকে গৃহহীন ও পথের ভিক্ষুক করেন, তাঁহার ন্যায় ভীষণ চোর জগতে কেহ দেখে নাই বা শুনে নাই।

    যদীয় নামাপি হরত্যশেষ,
    গিরি-প্রসারানপি পাপরাশীন ।
    আশ্চর্য্যরূপো ননু চৌর ঈদৃগ,
    দৃষ্টঃ শ্রুতো বা ন ময়া কদাপি ॥৪॥

    যাঁহার নামও লোকের পর্ব্বতপ্রমাণ পাপরাশি হরণ করেন, এরূপ আশ্চর্য্যরূপ চোর আমি কখনও দেখি নাই বা শুনি নাই।

    ধনঞ্চ মানঞ্চ তথেন্দ্রিয়াণি
    প্রাণাংশ্চ হৃত্বা মম সৰ্ব্বমেব ।
    পলায়সে কুত্র ধৃতোহদ্য চৌর
    ত্বং ভক্তিদাম্নাসি ময়া নিরুদ্ধঃ ॥৫॥

    হে চোর, তুমি আমার ধন, মান, ইন্দ্রিয় ও প্রাণ প্রভৃতি সমস্ত হরণ করিয়া কোথায় পলায়ন করিতেছ? আমি তোমাকে অদ্য ধরিয়া ফেলিয়াছি। এখন আমি তোমাকে ভক্তিরজ্জু-দ্বারা বাঁধিয়া রাখিলাম।

    ছিনৎসি ঘোরং যমপাশবন্ধং
    ভিনৎসি ভীমং ভবপাশবন্ধম্ ।
    ছিনৎসি সৰ্ব্বস্য সমস্ত-বন্ধং
    নৈবাত্মনো ভক্তকৃতন্তু বন্ধম্ ॥৬॥

    তুমি মনুষ্যের ঘোর যমপাশ ছিন্ন করিতে পার, তাহার ভয়ানক সংসার-বন্ধনও ছিন্ন করিতে পার, এমনকি সকলের সর্ব্বপ্রকার বন্ধনই ছিন্ন করিতে পার বটে, কিন্তু ভক্ত-কৃত নিজবন্ধন ছিন্ন করিতে পার না।

    মন্মানসে তামসরাশি-ঘোরে
    কারাগৃহে দুঃখময়ে নিবদ্ধঃ ।
    লভস্ব হে চৌর! হরে! চিরায়
    স্বচৌর্য্য-দোষোচিতমেব-দণ্ডম্ ॥৭॥

    হে চোর! হে হরি! তুমি ঘোর তমসাচ্ছন্ন দুঃখময় কারাগৃহরূপ আমার হৃদয়ে চিরকালের জন্য নিবদ্ধ হইয়া নিজ চৌর্য্য-অপরাধের জন্য উপযুক্ত দণ্ড গ্রহণ কর।

    কারাগৃহে বস সদা হৃদয়ে মদীয়ে,
    মদ্ভক্তিপাশ-দৃঢ়বন্ধন-নিশ্চলঃ সন্ ।
    ত্বাং কৃষ্ণ হে ! প্রলয়-কোটিশতান্তরেঽপি
    সৰ্ব্বস্বচৌর হৃদয়ান্ন হি মোচয়ামি ॥৮॥

    হে কৃষ্ণ! তুমি আমার হৃদয়-কারাগারে আমার ভক্তিপাশদ্বারা দৃঢ়রূপ বদ্ধ হইয়া সর্ব্বদা নিশ্চলভাবে অবস্থান কর। হে সর্ব্বস্ব-চোর! শতকোটী প্রলয়াবসানেও হৃদয় হইতে তোমাকে মুক্ত করিব না।